দেশে মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার শুরু হয়েছে। ১৯৭১ সালের কর্মকান্ডের জন্যে ৪০ বছর পর গ্রেফতার করা হয়েছে জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের। তাদের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ গঠন করা হচ্ছে, মামলা দেয়া হচ্ছে। তবে সরাসরি গণহত্যায় জড়িত, শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ক্ষমাপ্রাপ্ত ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধী বা অপারেশন সার্চলাইটের পরিকল্পনাকারীদের বিরুদ্ধে কোন মামলা দায়েরের কথা এখনো শোনা যায় নি।
শুধু বিরোধীদলীয় স্বাধীনতা বিরোধী নেতাদের বিচারের প্রক্রিয়ার আওতায় আনার মধ্য দিয়ে সরকার যুদ্ধাপরাধী বিষয়টিকে রাজনৈতিক এবং অনেক ঠুনকো একটি বিষয়ে পরিণত করেছেন। তবে আশার কথা এই যে, সরকার অবশেষে মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচারের কাজ শুরু করেছে। ১৯৭১ সালের অপরাধের বিচার কাজ শেষ হলে আগামীতে ১৯৭২-৭৪ সালে রক্ষীবাহিনী দ্বারা সংঘটিত গণহত্যার বিচার করার সুযোগও তৈরি হবে।
তবে যারা এই মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে বেশি সোচ্চার, তারাই যখন দেশে একের পর এক মানবতাবিরোধী তথা অমানবিক অপরাধ চালিয়া যেতে থাকে তখন বেশ অবাকই লাগে।
মানবতাবিরোধী এই অপরাধ কর্মকান্ডগুলোর উদাহরণ খুঁজতে বেশি দূর যেতে হয় না। সাম্প্রতিক ঘটনাবলী লক্ষ্য করলেই এর আঁচ পাওয়া যায়। ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহ আলমের নিখোঁজ হওয়া, পাবনা-সাভারে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নাজেহাল অবস্থা, নাটোরের উপজেলা চেয়ারম্যানের হত্যাকান্ড, সিরাজগঞ্জে ট্রেনে কাটা পড়ে ৬ জনের মৃত্যু এগুলো যেন একই সূত্রে গাঁথা।
তবে সবচেয়ে পীড়াদায়ক ঘটনার কথা বলতে গেলে স্বাভাবিকভাবেই নাটোরের কথা মনে পড়ে যায়। নাটোরে গত ৮ অক্টোবার যা ঘটলো তা যেন ২০০৮ এর ২৮ অক্টোবারের পুনঃরাবৃত্তি। ২০০৮ সালে চারদলীয় জোট ক্ষমতা ত্যাগের পর সরকারের শরিক জামায়াতের নেতা-কর্মীদের সাথে আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীদের বিনা অজুহাত এবং বিনা উসকানিতে সংঘর্ষ লেগে যায়। বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিন গেটে জামায়াতের পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচীতে হামলা চালায় লগি-বৈঠা ধারী আগে থেকেই প্রস্তুত আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীরা। সেই দিনও রাস্তায় ফেলে সানাউল্লাহ নুর বাবুর মতো করে পিটিয়ে হত্যা করা হয় জামায়াত-শিবিরের ৫ কর্মীকে।
তবে রাস্তায় ফেলে বেধরক পেটানোর এই সংস্কৃতি আওয়ামীলীগ কর্মীদের উত্তরাধিকার সুত্রে পাওয়া। ১৯৭২ সালে সরকার গঠনের পর থেকেই বিরোধী শক্তির উপর নেমে এসেছে তাদের অত্যাচারের নানা হাতিয়ার। আওয়ামীলীগের অত্যাচার থেকে রেহাই পায়নি মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার মেজর এম এ জলিল, অগ্নিকন্যা মতিয়া চৌধুরী, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক গুরু আতাউর রহমান খান, মুক্তিযোদ্ধা আ স ম আব্দুর রবসহ আরো অনেক নেতা।
এই অমানবিকতার ফলাফল তাদের ভোগ করতে হয়েছিল ২১ বছর ক্ষমতাহীন থাকার মাধ্যমে। শেখ মুজিবের মতো ব্যক্তিত্বকে চড়া মূল্য দিতে হয়েছিল শুধুমাত্র আওয়ামীলীগের কিছু উচ্ছৃংখল কর্মীর কারণে। তবে যখন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়, তখন এই কর্মীদের কাউকেই পথে পাওয়া যায়নি। আওয়ামীলীগ ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হওয়ার পরেও তাদের কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। দুধের মাছির মতো দুধ শেষ হওয়া মাত্র তারা হারিয়ে গেছে।
তবে সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয়গুলো হচ্ছে এই হত্যা নিয়ে যে সব মন্তব্য করা হচ্ছে সেগুলো। হত্যার সময় পুলিশ যে কতটা নিষ্ক্রিয় ছিল তা প্রতিটি সংবাদপত্রের প্রতিবেদন থেকেই স্পষ্টভাবে বোঝা যায়। আর স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের মতে, তাদেরকে নাকি আগে থেকে এই কর্মসূচীর কথা জানানো হয়নি। প্রধান বিরোধীদলের কর্মসূচী সম্পর্কে যদি স্থানীয় পুলিশ না জানে তবে তাদের কাছ থেকে জনগণের নিরাপত্তা আশা করা কঠিন। আর যদি তারা কর্মসূচীর কথা না জানতো, তবে কেনো ঐ স্থানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। হত্যাকান্ডের সময় পুলিশের একটি টহল ভ্যান ঐ স্থানের পাশ থেকে গিয়েছিল, কিন্তু হত্যাকারীদের প্রতিরোধের কোন ব্যবস্থাই নেয়নি। স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তাদের মতে, ওটা হাইওয়ে পুলিশের ভ্যান ছিল বলে তারা কোন পদক্ষেপ নেয়নি।
এই কথা প্রসঙ্গে একটা কৌতুকের কথা মনে পরে গেল। কৌতুকটি অনেকটা এরকম, এক রাতে কোন এক চোর একটি বাড়িতে চুরি করছিল। এমন সময় টহলরত এক পুলিশ দেখে ফেললে চোরটি পালানোর জন্যে প্রাণপণে ছুটতে থাকে। পুলিশটিও চোরের পেছনে ছুটতে শুরু করে। তবে, এক পর্যায়ে পুলিশটি থেমে যায় এবং চোরকে উদ্দেশ্য করে চিৎকার করে বলতে থাকে, "ওরে, তোকে আর দৌড়াতে হবে না, আমার ডিউটি এই এলাকা পর্যন্তই।"
পুলিশের দায়িত্ব জনসাধারণের নিরাপত্তা বিধান করা, সে মেট্রোপলিটানের পুলিশই হোক আর হাইওয়েরই হোক। হাইওয়ের পুলিশ কাউকে বাঁচানোর জন্যে এগিয়ে আসতে পারবে না, শুধু মহাসড়কের নিরাপত্তাতেই কাজ করবে এমন তো কোনো কথা নেই।
তবে সবচেয়ে দুঃখজনক মন্তব্যগুলো সম্ভবত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেই করেছেন। তাঁর মতে, নাটোরের ঘটনা বিএনপি'র অভ্যন্তরীন কোন্দলের ফসল। তিনি বিরোধীদলীয় নেত্রীকেও এই ব্যাপারে চ্যালেঞ্জ করেছেন। উল্লেখ্য এই যে, ঘটনার পর পর আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যে সভা বসে, সেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজে ঐ হত্যার জন্যে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেয়ার কথা বলেছিলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এরূপ স্ববিরোধীতার কোন উপযুক্ত কারণ এখনো ঠিক বুঝতে পারছিনা।
প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্য শুধু তার স্ববিরোধীতারই শামিলই নয়, বরং তার দলের অন্যায়ের পক্ষেও একটি সাফাই হিসেবেও বিবেচ্য। প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর তদন্ত কাজও যে প্রভাবমুক্ত থাকবে, এমনটা আশা করা কঠিনই বটে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য তার দলের গুণ্ডাদেরকে উৎসাহিত করতে পারে, এর ফলে দেশের আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়াটা স্বাভাবিক। তিনি যদি তাঁর বক্তব্যটির সঠিক ব্যখ্যা না দেন তবে তাঁর দলের কতিপয় কর্মীর অমানবিকতার সাথে সাথে তাঁর এই বক্তব্যও অমানবিকতার এক নিদর্শন হয়েই থাকবে।
Dsotooo tor blog pora amr o poloitics a nam ta khu icha kora but ami ai jinish tak khub dislike koriii so ki kora ja e amak aktu suggestion dis
ReplyDeleteshatil er dol ke support kora sru kor
ReplyDelete@ nazmul
via amader rajniti ekhon emon ek dushto chokrer moddhe dhuke geche jekhan theke ber howa asholey oneek kothin!! tobe eta thik ber howar pothta amaderkey dekhate hobe!!! i liked your writing!! carry on bro!!
ReplyDelete