Friday, 7 June 2013

বঙ্গবন্ধু উপগ্রহ টেন্ডারে দুর্নীতির প্রমাণ



২০১০ সালের ১১ নভেম্বর BTRC (Bangladesh Telecommunication Regulatory Commission) এই উপগহ উৎক্ষেপনের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করলে ৩১টি প্রতিষ্ঠান এই কাজের জন্যে দরখাস্ত করে। একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি ৯টি বিষয় বিবেচনায় এনে ৭টি প্রতিষ্ঠানের সংক্ষিপ্ত তালিকা করে। এই তালিকায় থাকা Space Partnership International-কে এই কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপনে কন্সালটেন্সির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিকে এই জন্যে ১০ মিলিয়ন ডলার দেয়া হবে।

BTRC-এর আগ্রহপত্র অনুসারে যেসকল প্রতিষ্ঠান এই কাজের জন্যে আবেদন করতে পারবে তাদের অন্তত ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। অন্তত ১০টি এই ধরণের উপগ্রহ উৎক্ষেপনের অভিজ্ঞতা হাকতে হবে এবং দুই বা ততোধিক মহাকাশের উপযোগী উপগ্রহ তৈরিকারকের সাথে সম্পর্ক থাকতে হবে।

কিন্তু Space Partnership International, ২০০৯ সালের ২৪ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ডেলাওয়ারে নথিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। অর্থাৎ মাত্র এক বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে তারা এই কনসালটেন্সির দায়িত্ব পায়। এই স্বল্প সময়ে তারা উপরে উল্লিখিত কোন শর্তই পূরণ করতে পারেনি



তবে BTRC এই প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে সাফাই গেয়ে জানায় তারা RKF Engineering Solutions নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে যৌথ অংশিদারীর ভিত্তিতে আবেদন করেছিল এবং RKF Engineering Solutions-এর উক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। কিন্তু এই দুই প্রতিষ্ঠানের প্রধানই নিশ্চিত করেছে তাদের মধ্যে এমন কোন চুক্তি নেই, এবং RKF Engineering Solutions একটি সাব-কন্ট্রাক্টর প্রতিষ্ঠান মাত্র যাদের অভিজ্ঞতা মাত্র ৯ বছরের।

এদিকে অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, BTRC-এর ভেতর থেকেই এই প্রতিষ্ঠানকে টেন্ডার পাইয়ে দিতে কলকাঠি নাড়া হয়। প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে কিছু ভুয়া কাগজপত্র পেশ করা হয়। এসময় Globecomm Systems Incorporated নামে একটি প্রতিষ্ঠান অস্বচ্ছ টেন্ডার প্রক্রিয়া নিয়ে আপত্তিও জানায়।

Space Partnership International- নামে যে প্রতিষ্ঠানকে বঙ্গবন্ধু-১ কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপনে কনসালটেন্সির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সেটি নিতান্তই ছোট একটি প্রতিষ্ঠান, স্টাফ সংখ্যা এক ডজন বা তার কিছু বেশি। এমন একটি প্রতিষ্ঠান যাদের লোকবল অনেক কম, অভিজ্ঞতা শুন্যের কোঠায় তাদের কাজ দেয়ার ক্ষেত্রে BTRC স্পষ্টতই প্রভাব খাটিয়েছে

যে উচ্চপর্যায়ের কমিটি ৩১টি দরখাস্ত যাচাই-বাছাই করে ৭টি প্রতিষ্ঠানের তালিকা করেছিল সেই কমিটির এক সদস্য জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের নামকরা প্রতিষ্ঠান Globecomm Systems Incorporated তাদের করা তালিকার এক নম্বরে ছিল। কমিটির সদস্যদের দেয়া মার্কস অনুসারে তাদের গড় ছিল ৯১। অন্যদিকে কাজ পাওয়া Space Partnership International-এর সর্বসাকুল্যে গড়ে ৮০'র মতো মার্কস পায়, স্বাভাবিকভাবেই তাদের অবস্থান ছিল নিচের দিকে। কমিটি সদস্যের মতে প্রতিষ্ঠানটি কাজটির জন্যে অযোগ্য।

কিন্তু Space Partnership International-এর পক্ষ থেকে Globecomm-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয় যে তারা নিজেরাই উপগ্রহ তৈরিকারক একটি প্রতিষ্ঠান যা BTRC-এর শর্তের পরিপন্থী। তবে অনুসন্ধানে জানা গেছে Globecomm-এর এমন কোন প্রকল্প নেই। বরং Space Partnership International-এর সাথে যে প্রতিষ্ঠানের যৌথ অংশীদারী ও সুসম্পর্কের কথা জানানো হয়েছিল, সেই RKF Engineering Solutions-এর এই ধরণের কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে।

কিন্তু এরপরেও এই ভিত্তিহীন অভিযোগ ও অর্থের অঙ্ক বিবেচনায় এনে Globecomm Systems Incorporated-এর পরিবর্তে Space Partnership International-কে কাজ দেয়া হয়।

এই কাজ পেতে তারা BTRC বা এর সাথে জড়িতদের মোটা অঙ্কের ঘুষ দিয়েছে বলেও অভিযোগ আছে। এর সাথে সাথে প্রমাণ পাওয়া গেছে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় BTRC'র নগ্ন হস্তক্ষেপেরও। BTRC মন্ত্রীসভার ক্রয়সংক্রান্ত কমিটিতে পাঠানোর আগে উভয় প্রতিষ্ঠানের মার্কসের বড় ধরণের হেরফের ঘটিয়ে Space Partnership International-কে যোগ্য হিসেবে দেখায়।

উল্লেখ্য, Space Partnership International-এর বাংলাদেশের স্থানীয় প্রতিনিধি বেসামরিক বিমানমন্ত্রী ফারুক খানের সামিট গ্রুপ

No comments:

Post a Comment