ডেভিড বার্গম্যানকে
জামাতি হিসেবে চিহ্নিত
করার কাজ সুসম্পন্ন
হয়েছে। টেলিগ্রাফের একটা
প্রতিবেদনের সূত্র ধরে
বাঁশেরকেল্লার এডমিনদের এডমিন,
প্রোপাগান্ডিস্ট বলা হয়েছে এই কিছুদিন আগেও।
আমি
যখন প্রথম এই লোকের নাম শুনি
তখন তাকে জামাতি
এজেন্ট হিসেবে আখ্যায়িত
করা হচ্ছিল। জামাতের
অনেক পয়সা, খোদ
প্রধানমন্ত্রী-অর্থমন্ত্রী তাদের
ব্যাংক থেকে দেয়া
কোটি কোটি টাকার
অনুদান নিতে দ্বিধাবোধ
করেন না। বার্গম্যান
যদি জামাতের টাকা
খেয়ে থাকেন তবে
অবাক হবো না।
তবে বাংলাদেশের নিউএজের এই বিশেষ প্রতিবেদনভিত্তিক সম্পাদকের অতীত সম্পর্কে
জানা থাকলে এটা
বিশ্বাস করতে কষ্ট
হয়।
ডেভিড বার্গম্যান
নিজের জামাত সংশ্লিষ্টতা
নিয়ে এর আগে
কিছু না বললেও
সম্প্রতি ভারতের তেহেলকা
ডট কমের কাছে
দেয়া এক সাক্ষাৎকারে
বিষয়টিকে দুঃখজনক বলেছেন,
বলেছেন তাকে জামাতের
পেইড এজেন্ট বলা
হয় যা মোটেও
সত্য নয়।
প্রথম প্রশ্ন
হচ্ছে ডেভিড বার্গম্যান
কে? তাকে এত গুরুত্ব দেয়ার কোন
কারণ আছে কিনা?
আমি যতদূর
জানি ডেভিড বার্গম্যান
একজন সাংবাদিক। কেমন
সাংবাদিক তা বিচার
করার মত মানুষ
আমি না, আমি
অতি ক্ষুদ্র মানুষ-
আজকালকার ফেসবুক বিশেষজ্ঞদের
তুলনায় অণুজীব পর্যায়ের। তবে টেলিগ্রাফ, সিএনএন বা তেহেলকা বাংলাদেশ বিষয়ে প্রতিবেদনে যার মতামতকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়, সাংবাদিক হিসেবে তাঁর দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলাটা আমার অন্তত সাজে না।
যতটুকু জানতে
পেরেছি তা হচ্ছে
নব্বইয়ের দশকে বিএনপি
শাসনামলে, ১৯৯৫ সালের দিকে ডেভিড
বার্গম্যানের একটি প্রতিবেদন The War Crimes File, ডিসপ্যাচেস
নামে একটি অনুষ্ঠানে
প্রচার করা হয়।
প্রায়
একঘণ্টার প্রতিবেদনটা জামাতি
কাউকে দেখালে নির্ঘাত
লাফ দিয়ে “কাফিরের
বাচ্চাদের ইসলামবিরোধী ষড়যন্ত্র”
হিসেবে আখ্যা দেয়ার
১০১% সম্ভাবনা আছে। প্রতিবেদনে
তৎকালীন সময়ে লন্ডন
এবং বার্মিংহ্যামে বসবাসরত
তিনজন ভয়াবহ যুদ্ধাপরাধীর
কথা সবার সামনে
তুলে ধরা হয়- লুতফুর রহমান, আবু
সাঈদ এবং চৌধুরী
মুঈন উদ্দীন। প্রতিবেদনটায়
শুধুই যে তাদের
পরিচয় তুলে ধরা
হয় তা নয়, তাদের যে ব্রিটিশ
সরকারের কাছে আবেদন
করলে ব্রিটেনেই বিচার
করা সম্ভব তাও
জানানো হয়।
ডেভিড বার্গম্যান
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং
যুদ্ধাপরাধের ওপর অতীতে যে কাজ করেছেন তার মূল্য যারা তার সমালোচনা যারা করেন তারাও জানেন। ডেভিড
বার্গম্যান ১৯৯৩ সালের এপ্রিল থেকে এই প্রতিবেদনের কাজ শুরু করে প্রায় দুইবছর এটি
তৈরি করতে নিরলস পরিশ্রম করেন। ২০১০ সালে যখন
সেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের
উদ্দেশ্যে যখন
ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয় তখন ডেভিড বার্গম্যান
এই ট্রাইব্যুনালের বিভিন্ন
বিষয়ের ওপর কাজ
করতে থাকেন এবং
নিজের অভিজ্ঞতা থেকে কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি খুঁজে পান এবং
সেগুলো তুলে ধরেন একান্ত ব্যাক্তিগত একটি ব্লগে।
এর মধ্যে
একটি প্রতিবেদন নিয়ে
তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজিরও
হতে হয়। প্রতিবেদনের
কিছু অংশ নিয়ে
আদালত অসন্তুষ্টি প্রকাশ
করেন। এর পর থেকেই সম্ভবত তার
উপর ছাগু ট্যাগটা
লাগানো শুরু হয়।
আমি অনেক
বার্গম্যান বিদ্বেষীকে বার্গম্যানের
যেই ব্লগটা তার
সবচেয়ে অফেন্সিভ মনে
হয়েছে, বার্গম্যানের যেই
লেখা তার কাছে
পুরোপুরি প্রোপাগান্ডা মনে
হয়েছে তা দিতে
বলেছি। এরা বেশিরভাগ
সময়ই আমাকে ছাগু
ট্যাগ দিয়েছে কিংবা
আমাকেই খুঁজে নেয়ার
পরামর্শ দিয়েছে। আমি
খোঁজার চেষ্টা করেছি।
অনেক বেশি অফেন্সিভ
কিছু পাই নাই,
সম্ভবত আমার ইংরেজি
জ্ঞানের অভাব কিংবা
মাথায় ঘিলুর অভাবের
কারণে এমন হয়েছে।
কারণ ফেসবুকের একাধিক
পীর নাকি অনেক
কিছু পেয়েছে।
বাংলাদেশে বেশ
কয়েকজন সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী
আহমদ ছফাকে এককালে মৌলবাদী হিসেবে চিহ্নিত
করতো। প্রখ্যাত আওয়ামী
বুদ্ধিজীবী ডক্টর নীলিমা
ইব্রাহিম একবার প্রখ্যাত
মুরতাদ এবং গণআদালতি
আসামী ডক্টর আহমদ
শরীফকে রাজাকার আশ্রিত
বলে গালি দিয়েছিলেন।
সাঈদীর রায়ের পর জামাতের এজেন্ট টবি ক্যাডম্যানের সাথে বার্গম্যানের দ্বিমত, টেলর ডিনারম্যানের
প্রতিবেদনের কঠোর সমালোচনা
আর তেহেলকা ডট কমকে দেয়া তার
সাক্ষাৎকার দেখার
পর আমার ধারণা
আওয়ামী ট্যাগিং–এর আরেকজন বলির পাঁঠা
সম্ভবত পাওয়া গেল।
তেহেলকাকে দেয়া
সাক্ষাৎকারের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য
অংশ আমার যেটি
মনে হয়েছে তা মূলত ডেভিড বার্গম্যানকে
তেহেলকাই ধরিয়ে দিয়েছে,
যাতে বোঝা যায়
তারাও বিষয়টা সম্পর্কে
জেনেশুনেই বলেছে। তেহেলকার
প্রতিনিধি বার্গম্যানকে প্রশ্ন
করেন,
“বাংলাদেশে আমি নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গীর কারও কাছ থেকে কিছু জানার চেষ্টা করেছিলাম, যা আমার কাছে প্রায় অসম্ভব মনে হয়েছে কারণ সেখানে হয় আপনাকে ট্রাইব্যুনালের পক্ষেই হতে হবে নয়তো রাজাকারদের পক্ষে ঠেলে দেয়া হবে। আর ট্রাইব্যুনালের পক্ষে থাকলে আপনি কোনভাবেই ট্রাইব্যুনালের কোন সমালোচনা করতে পারবেন না। এভাবেই পুরো পরিস্থিতিটিকে তৈরি করা হয়েছে। এটা কি সত্যি?”
বার্গম্যানের উত্তর
ছিল,
“আমি আপনার সাথে এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ একমত। এবং এটি হচ্ছে এই মুহূর্তে বাংলাদেশে ঘটা সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। আপনি যদি ট্রাইব্যুনালের কোন বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, সমালোচনা করেন তাহলেই আপনাকে জামাতি, রাজাকার হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। এটি এই ট্রাইব্যুনালের শুরু থেকেই হয়ে আসছে।”
আমার কাছে
বার্গম্যানের এই কথাটার
একটা বিশেষ মূল্য
আছে।
আজ থেকে ৪০ বছর
আগে এবিএম খালেক
মজুমদার নামে এক চিহ্নিত রাজাকার, শহীদুল্লাহ
কায়সার গুম ও হত্যা মামলায় যার
মাত্র সাত বছরের
জেল ও দশ হাজার টাকা জরিমানা
হয়েছিল খোদ পান্না
কায়সারের সাক্ষ্য সত্বেও,
সে ১৯৭৬ সালের
জুলাইয়ে উচ্চ আদালতের
নির্দেশে ছাড়া পায়
প্রায় চারবছর জেল
খাটার পর।
এ প্রসঙ্গে সুলতানা কামালের
জেরার কিছু অংশ
দিচ্ছি,
“ শহীদুল্লাহ কায়সার হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত ছিলেন জামায়াতের সদস্য খালেক মজুমদার, তাঁকে আলবদর বলা হয়েছিল। এই মামলায় নিম্ন আদালত শাস্তি দিলেও খালেক মজুমদার উচ্চ আদালতে আপিল করে খালাস পান।
উচ্চ আদালতের রায়ে বলা হয়, খালেক মজুমদারকে আলবদর প্রমাণে রাষ্ট্রপক্ষ ব্যর্থ হয়েছে। সুলতানা কামাল এ বক্তব্যে হ্যাঁ সূচক জবাব দেন। ”
উচ্চ আদালতে এই মামলার
রায় দেন বিচারপতি
বদরুল হায়দার চৌধুরীর
বেঞ্চ। বদরুল হায়দার
চৌধুরী ’৯১-এর রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে আওয়ামী
লীগ ও বিরোধীদলগুলোর
সমর্থন পান।
শুধুমাত্র আলবদর প্রমাণে ব্যর্থতার
জন্যে খালেক মজুমদারের
মতো ঘাতক যদি
উচ্চ আদালতে ছাড়া
পেতে পারে তাহলে
ট্রাইব্যুনালের কোন একটা ভুলের
জন্যে ভবিষ্যতে এইসব
রাজাকারদের ছাড়া পাওয়া
কি অসম্ভব?
তাই
যাকে তাকে রাজাকার-ছাগু-জামাতি ট্যাগ দেয়ার আগে কি ট্রাইব্যুনালের
ত্রুটিগুলো সংশোধন কি অধিক জরুরী নয়?
এটিএন নিউজের প্রভাষ আমিন কিছুদিন আগে পরিবর্তন ডট কমে প্রথম আলোর সমালোচনা করে জামায়াতের রক্ষাকবচ প্রথম আলো! প্রবন্ধে লেখেন,
এটিএন নিউজের প্রভাষ আমিন কিছুদিন আগে পরিবর্তন ডট কমে প্রথম আলোর সমালোচনা করে জামায়াতের রক্ষাকবচ প্রথম আলো! প্রবন্ধে লেখেন,
সমালোচক দুই কিসিমের- বন্ধু সমালোচক, শত্রু সমালোচক। আমি বন্ধু সমালোচক। আমি প্রথম আলোর ভুলটা ধরিয়ে দিতে চাই। কোনটা ভুল, কোনটা অপরাধ; কোনটা অসাবধানতা, কোনটা ইচ্ছাকৃত- তা ধরিয়ে দিতে চাই।
বার্গম্যান কোন ধারার সমালোচক তা উপলব্ধি করতে হবে। অন্তত তাঁর সাথে যোগাযোগ করে যতটুকু দেখেছি তাঁকে "বন্ধু সমালোচক" মনে হয়েছে। তিনি অনেক সময় নিয়ে এই বিচারের পক্ষে টবি ক্যাডম্যান এবং আব্বাস নোমানের অপপ্রচারের জবাব দিয়েছেন। তবে একই সাথে বলেছেন এই বিচারের স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা এবং আন্তর্জাতিক মান নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তার কথা।
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে এই বাংলাদেশ হচ্ছে সেই দেশ যে দেশে "ভুট্টো জিন্দাবাদ, পাকিস্তান জিন্দাবাদ" শ্লোগান দেয়া হয়েছে শেখ মুজিবুর রহমানের সামনেই, আমাদের উপর চালানো গণহত্যার তিন বছর পেরোনোর আগেই।
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে এই বাংলাদেশ হচ্ছে সেই দেশ যে দেশে "ভুট্টো জিন্দাবাদ, পাকিস্তান জিন্দাবাদ" শ্লোগান দেয়া হয়েছে শেখ মুজিবুর রহমানের সামনেই, আমাদের উপর চালানো গণহত্যার তিন বছর পেরোনোর আগেই।
আগামীতে কি ঘটতে যাচ্ছে আমরা কেউই তা জানি না, জানি না ভবিষ্যতে জামাতের কর্মপন্থা কি হতে যাচ্ছে। আগামীতে যে জামাত আন্তর্জাতিক কোর্টে বল ঠেলে এই ট্রাইব্যুনালকে বিতর্কিত এবং এই বিচারকে "প্রহসন" হিসেবে আখ্যায়িত করবে না, এই নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারবে না।
তাই জোর দিয়েই বলছি, ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে অহেতুক মানুষের চরিত্রহনন বন্ধ করে এই বিচারের স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা আর মান রক্ষা করাটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

তথ্যগুলি দেয়ার জন্য ধন্যবাদ । জানলাম । ডেভিড বার্গম্যান সম্পর্কে এতটা জানতাম না ।
ReplyDelete